ঢাকা,শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

র‌্যাবের অভিযানে রোহিঙ্গা সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানসহ গ্রেফতার -৬,অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার

আব্দুস সালাম, টেকনাফ  ::
কক্সবাজারের টেকনাফের দূর্গম পাহাড় কেন্দ্রিক বিভিন্ন সময়ে অপহরণ ও ডাকাতির অন্যতম হোতা ছালেহ বাহিনীর প্রধান হাফিজুর রহমান ওরফে ছলে উদ্দিন ও তার অন্যতম সহযোগী সোহেল ডাকাত সহ ৬ জনকে টেকনাফের বাহারছড়া পাহাড়ী এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১৫ এর সদস্যরা। এসময় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।

কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’এন্ড মিডিয়া) মোঃ আবু সালাম চৌধুরী এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, গতকাল শুক্রবার (৫ মে) রাতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে টেকনাফের বাহারছড়া পাহাড় এলাকায় র‌্যাবের অভিযানে টেকনাফের দূর্গম পাহাড় কেন্দ্রিক বিভিন্ন সময়ে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অন্যতম হোতা হাফিজুর রহমান ওরফে ছালেহ উদ্দিন ছলে ডাকাত (৩০) ও তার সহযোগী নুরুল আলম ওরফে নুরু (৪০) আক্তার কামাল ওরফে সোহেল (৩৭), ওরফে নুরুল আলম ওরফে লালু (২৪), হারুনুর রশিদ (২৩) এবং রিয়াজ উদ্দিন ওরফে বাপ্পি (১৭) ’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১৫ এর সদস্যরা। বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনাকালে ঘটনাস্থল থেকে ১টি বিদেশী পিস্তল, ৩টি এসবিবিএল রাইফেল,২টি ওয়ান শুটার গান,৬টি দেশীয় তৈরি বন্দুক, ৫ রাউন্ড পিস্তলের গুলি,১৭ রাউন্ড তাজা কার্তুজ,৪ রাউন্ড খালি কার্তুজ,২টি ধারালো ছুরি,৬টি দেশীয় তৈরি দা ও ৭টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, টেকনাফের দূর্গম পাহাড়ে অবস্থান করে হাফিজুর রহমান ওরফে ছালেহ ডাকাতের সরাসরি নেতৃত্বে এই চক্রটি অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, মাদক ব্যবসাসহ অন্যান্য অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তার এই সন্ত্রাসী দলে সদস্য সংখ্যা ১২ থেকে ১৫ জন। ছালেহ এর নেতৃত্বে এই সন্ত্রাসী দলটি টেকনাফের শালবাগান পাহাড়, জুম্মা পাড়া ও ন্যাচার পার্ক এলাকা, বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালী পাড়া পাহাড়, বড় ডেইল পাহাড়, কচ্ছপিয়া পাহাড়, জাহাজপুরা পাহাড়, মাদারবনিয়া পাহাড়, হলবনিয়া পাহাড়, শিলখালী পাহাড় এলাকায় অবস্থান করে অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করত। কখনও অটোরিক্সার চালক এবং কখনও সিএনজি চালক হিসেবে ছদ্মবেশ ধারণ করে বিভিন্ন কৌশলে তারা কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা, হোয়াইক্যং, উনচিপ্রাং, শামলাপুর, জাদিমোড়া ও টেকনাফ ইত্যাদি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের টার্গেট করে অপহরণ পূর্বক মুক্তিপণ আদায় ও ডাকাতি করত।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, ছলের নেতৃত্বে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর টেকনাফের বাহারছড়া এলাকা থেকে ১০জন কৃষক, চলতি বছরের ২ জানুয়ারী রোহিঙ্গা শরনার্থী রেজুয়ানা, ২৬ মার্চ ন্যাচার পার্কের দর্শনার্থী হ্নীলার দদমিয়ার বাসিন্দা কবির আহাম্মদের ছেলে রিদুয়ান সবুজ (১৭) ও একই এলাকার বাসিন্দা মাওলানা আবুল কালামের ছেলে নুরুল মোস্তফা (১৬), ১৫ এপ্রিল ফুলের ডেইল এলাকা থেকে বাবুল মেম্বারের ছেলে ফয়সাল (১৭), ৩০ এপ্রিল হামিদুল্লাহ (২৪) এবং ৩ মে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-০৭ ব্লক- ই/৬ এ বসবাসরত আবুল কালামসহ অনেক ব্যক্তিকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের মাধ্যমে ছেড়ে দিত। উল্লেখ্য, তারা অপহৃত ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রতি ৫-১০ লাখ টাকা ক্ষেত্র বিশেষে তার চেয়ে কম-বেশি মুক্তিপণ আদায় করত। মুক্তিপণের টাকা আদায় করে অপহৃত ব্যক্তির উপর চালানো হত পৈশাচিক নির্যাতন। প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার কারণে মুক্তিপণের অর্থ প্রদান করে ফেরত আসা অধিকাংশরাই অপহরণ কারীদের সম্পর্কে অভিযোগ দিতে বা মুখ খুলতে ভয় পেত। এ সন্ত্রাসী দল কর্তৃক প্রায় অর্ধ-শতাধিক অপহৃত হয়েছে বলে সূত্রে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত হাফিজুর রহমান ওরফে ছালেহ উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় , ২০১২ সালে সে অবৈধ পথে বাংলাদেশে আসে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে সে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যায় এবং তৎকালীন সময়ে পাশ্ববর্তী দেশ সমূহের বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাথে যোগসাজসে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে সে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে এবং উখিয়া ও কক্সবাজারে অবস্থান করে এবং অবৈধভাবে পাশ্ববর্তী দেশে যাতায়াত ও অপরাধমূলক কার্যক্রম করতে থাকে।
এ সময় অপহরণ-ডাকাতি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রম করে আসছিল ছালেহ উদ্দিন। ছালেহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড সংগঠনের জন্য ১২/১৫ জন সদস্য নিয়ে ছালে বাহিনী গঠন করে। সে দুর্গম পাহাড়ে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান করে অপহরণ, ডাকাতি, ও মাদক চোরাচালান কার্যক্রম পরিচালনা করত। এছাড়াও মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডসহ পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে মানবপাচার করত বলে জানা যায়। হাফিজুর রহমান ওরফে ছালেহ ডাকাতের নামে একাধিক মামলা থাকায় সে আত্মগোপন থাকে।
জিজ্ঞাসাবাদে জানায়,গ্রেফতারকৃত আক্তার কামাল ওরফে সোহেল গ্রেফতারকৃত ছালেহ উদ্দিনের অন্যতম সহযোগী। সে অপহরণের পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের জন্য গ্রেফতারকৃত ছালেহ’র নির্দেশনায় বিভিন্ন কার্যক্রমের সমন্বয় করত। এছাড়াও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত ছিল বলে জানা যায়। অপহরণ, ডাকাতি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধে তার বিরুদ্ধে উখিয়াসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় ১০ এর অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। সে অস্ত্রসহ মহড়া ও আতংক সৃষ্টি করত বলে জানা যায়। সে ইতিপূর্বে বিভিন্ন অপরাধে ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে একাধিকবার কারাভোগ করে বলে জানা যায়।
তাছাড়া হাফিজুর রহমান ওরফে ছালেহ উদ্দিনের আরেক সহযোগী নুরুল আলম ওরফে নুরু’র বিরুদ্ধে উখিয়াসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় খুন, অস্ত্র, মাদকসহ ৬ এর অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। সে এলাকা আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাদি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় করত বলে জানা যায়। নুরুল আলম ওরফে নুরু ইতিপূর্বে কারাভোগ করে বলে জানা যায়। নুরুল আলম ওরফে লালু (২৪) ছালেহ ডাকাতের অপরাধ কর্মকান্ডের অন্যতম সহযোগী এবং বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাদি, ডাকাতি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়সহ অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিল। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় একের অধিক মামলা রয়েছে এবং একাধিকবার কারাভোগ করে বলে জানা যায়।
ছালেহ এর নেতৃত্বে তার অন্যান্য সহযোগী হারুনুর রশিদ (২৩) এবং রিয়াজ উদ্দিন ওরফে বাপ্পি (১৭) বিভিন্ন উপায়ে চাঁদা সংগ্রহ, ডাকাতি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের কাজে সহায়তাসহ অস্ত্র দেখিয়ে মানুষের মনে ভয়-ভীতি সৃষ্টি করে বিভিন্ন রকম অপরাধমূলক কর্মকান্ড সংগঠিত করে। মূলত তাদের লক্ষ্য ছিল, অপহরণের পর অপহৃত ভিকটিমদের নিকট থেকে অর্থ সংগ্রহ করা এবং তাদের পরিবারের নিকট হতে মুক্তিপণ আদায় করা।

তিনি আরো জানান, গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া ছালেহ উদ্দিন ওরফে ছালে ডাকাতের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পাঠকের মতামত: